হাটহাজারীতে সংঘর্ষে আহত ৭০, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি

চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদ্রাসা) নিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে উসকানিমূলক ফেসবুকে ছবি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সুন্নি ও কওমি আকিদার লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষে দুপক্ষের অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন।
জানা যায়, ছবি পোস্টকে কেন্দ্র করে এদিন সন্ধ্যা থেকে হাটহাজারীতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে ওই এলাকায় ৩ ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এসময় বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে আন্দোলকারীরা। ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৬০ জনের বেশি আহত হয়ে হাটহাজারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। আহতদের মধ্যে ৩ জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়াল্টি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতরা সবাই আশঙ্কামুক্ত।
স্থানীয় সূত্র জানা যায়, আরিয়ান ইব্রাহিম (২০) নামের এক যুবক নিজের ফেসবুক আইডিতে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে অবমাননাকর অঙ্গভঙ্গি করে ছবি তুলে পোস্ট করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে কওমি মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফটিকছড়ি থানা পুলিশ পৌর সদর থেকে ইব্রাহিমকে আটক করে। ইব্রাহীম পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মুহাম্মদ মুছার ছেলে। আটকের পর সে ভিডিও বার্তায় উক্ত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আহমেদ।
আরিয়ান ইব্রাহিমের ফেসবুক আইডিতে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় থাকলেও সেই ছাত্রদলের কেউ নয় বলে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন ফটিকছড়ি পৌরসভা ছাত্রদলের সভাপতি একরাম উল্লাহ চৌধুরী। এছাড়াও আটক যুবকের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান ফটিকছড়ি পৌরসভা ছাত্রদল।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
১৪৪ ধারা জারি
উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন। এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, আমার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার জন্য চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন মীরের হাট থেকে এগারো মাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত এবং উপজেলা গেট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, হাটহাজারী পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টা ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করলাম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সব প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সব প্রকার দেশি অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম।