সম্পত্তি বিতর্কে বিপদে ব্রিটিশ রাজনীতিকরা, হারাচ্ছেন মন্ত্রিত্ব

ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও কর–সংক্রান্ত বিতর্কে জড়িয়ে একের পর এক ব্রিটিশ নারী মন্ত্রী পদত্যাগ করছেন। সর্বশেষ ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেয়নার পদ ছাড়লেন। এর আগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন লেবার পার্টির দুই শীর্ষ নারী রাজনীতিক টিউলিপ সিদ্দিক ও রুশানারা আলী।
রেয়নারের হোভের নতুন ফ্ল্যাটকে ঘিরে কর জটিলতা ও বড় অঙ্কের বন্ধকী ঋণ তার পদত্যাগের কারণ। ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও হাউজিং মন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ানোয় তার বার্ষিক আয় ৬৭ হাজার পাউন্ড কমে গেছে। যা দিয়ে মাসে প্রায় ৪ হাজার পাউন্ডের কিস্তি মেটানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সম্ভাব্য ৫৩ হাজার পাউন্ড কর বিল ও জরিমানা।
রেয়নার নিজের সঞ্চয় ও পারিবারিক বাড়ির অংশ বিক্রি করে এ ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। কিন্তু কর প্রদানে গড়মিল ধরা পড়ায় তার বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ বাড়ে। সম্প্রতি ভবনের দেয়ালে ‘কর ফাঁকিদাতা’ লেখা গ্রাফিতি আঁকা হয়।
এর আগে গৃহহীনতা মন্ত্রী রুশানারা আলী পদত্যাগ করেন ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ ও ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগে। তিনি নিজেই যে সরকারের রেন্টার্স রাইটস বিল সমর্থন করছিলেন, সেই আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকভাবে ভাড়া বাড়ানোয় ভণ্ডামির অভিযোগে সমালোচিত হতে হয়েছিল তাকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকও গত জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন। তার পরিবারের সম্পত্তি ও আত্মীয়তার সূত্রে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে সমালোচনা বাড়ায় তিনি সরে দাঁড়ান। যদিও তদন্তে কোনও অনিয়ম প্রমাণিত হয়নি, সুনামের ক্ষতি তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থ যখন জনস্বার্থ ও রাজনৈতিক দায়িত্বের সঙ্গে সংঘর্ষে আসে, তখন এর পরিণতি ভয়াবহ হয়। আবাসন, দুর্নীতি দমন ও গৃহহীনতা–সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা তিন নারী মন্ত্রীই শেষ পর্যন্ত একই বিতর্কে পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগের পর রেয়নার, সিদ্দিক ও আলী এখন ব্যাকবেঞ্চ এমপি হিসেবে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় কাজ করছেন। তবে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্টভাবেই কমে গেছে। রেয়নারের ভবিষ্যৎ সবচেয়ে অনিশ্চিত। আর্থিক সংকট সামাল দিতে তাকে হোভের ফ্ল্যাট বিক্রি করতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লেবার সরকারের জন্য এই ধারাবাহিক পদত্যাগ এখন বড় রাজনৈতিক সংকটে রূপ নিয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও আর্থিক স্বার্থকে মন্ত্রিত্বের চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ যুক্তরাজ্যে নতুন করে রাজনৈতিক সততার প্রশ্ন তুলছে।